top of page

রুপকথার চিন্তাফু


Standing Infront of Sleeping Buddha from Aahl


আমরা বাঙালীরা কমবেশি সকলেই ল্যাদখোর। একটু ঠান্ডা পড়লো, কী পড়লো না ওমনি মন বলে কম্বলের তলায় ঢুকে একটু ল্যাদ খাই। গরমে বাইরে যখন সূর্যদেব তার রুদ্র মূর্তি ধারন করেন তখন ঘরে AC চালিয়ে মনে হয় একটু ল্যাদ খাই। আবার বর্ষার দিনে যখন মেঘের মধ্যে ছিদ্র হয়ে যাওয়ার কারণে চারদিক বৃষ্টিস্নাত হয়ে থাকে তখন মন বলে গরম গরম খিচুড়ি আর সাথে বেগুনী, ইলিশ মাছ ভাজা সহযোগে মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে একটু ল্যাদ খাই। মানে season টা যাই হোক না কেন ল্যাদ খাওয়া টা mandatory. কিন্তু অদ্ভুত ভাবেই এই বাঙালীরাই হচ্ছে সব থেকে বেশি ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। Adventure করতে তাদের জুড়ি মেলা ভার। এই যেমন "শঙ্কর" কেই ধরুন না, তার কথা শোনে নি এমন বাঙালী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। Adventure এর নেশায় সুদূর Africa এ পাড়ি দিয়েছিল সে। তেমনি বাঙালী adventure এর গন্ধ পেলেই হল। আর সেই adventure যদি পাহাড়ে হয়ে তাহলে তো পোয়া বারো। Adventure ও পাহাড় এই দুটোর এমনই মহিমা যে একজন চূড়ান্ত ল্যাদখোর মানুষকেও adventurous করে তোলে। তাই আমিও আবার সেই adventure এর নেশায় Himalayan Passion এর হাত ধরে নতুন পথে, কিছু নতুন মানুষ দের সঙ্গী করে নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে আবারো পাড়ি জমালাম।

Kedarkantha থেকে ফেরার একমাস ও হয়ে নি মন টা আবার পাহাড়ের জন্য কেঁদে উঠলো। কিন্তু কোথায় যাবো সেটা কিছুতেই ঠিক করতে পারছিলাম না অথচ যেতেই হবে। শেষে ঠিক করলাম আপামোর বাঙালি যাকে দেখলে আবেগে ভাসে তার দর্শনই করবো। হ্যাঁ Kanchenjungha। আর যেই মুহূর্তে ভাবা সেই মুহূর্তে কাজ সেরে ফেলা। এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে সঙ্গে সঙ্গে Dhrubo da কে বললাম CHINTAPHU তে যাবো আর দাদাও বললো চলো। ব্যাস সমস্ত রকম কথাবার্তা বলে, যাওয়া confirm করে নিলাম। সময়ে মতো টিকিট টাও কেটে ফেললাম। তারপরেই আবার preparation শুরু।


3rd March:

দুপুর 1:30টা নাগাদ ready হয়ে বেরিয়ে পড়লাম কলকাতা স্টেশনের দিকে ট্রেন ধরার উদ্দেশ্যে। সেখানে আমি ছাড়াও ছিল Dhrubo da, Sulagna di আর Anurupa di, অর্থাৎ মানেটা এটাই দাঁড়ালো যে এখান থেকে আমি একা যাচ্ছি না, আমরা চারজন একসাথে একই ট্রেনে যাচ্ছি আর বাকিরা মানে Shantanu da, Sourish da আর Barsha আলাদা আসছে।

সময়ে মতো স্টেশনে পৌঁছে তো গেলাম কিন্তু গিয়ে জানতে পারলাম ট্রেন 3 ঘণ্টা late। বোঝো কান্ড! এবার কি করবো? বাড়ি তো আর ফিরতে পারবো না। অগত্যা স্টেশনে বসে চুটিয়ে আড্ডা দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ রইলো না। সেখানে Anupam da আর Gora dar সাথেও আলাপ হলো। তারা আমাদের see off করতে এসেছিল। তো সবাই মিলে আড্ডা দিতে দিতে কখন যে ট্রেনের time হয়ে গেলো তা খেয়াল করি নি। শেষে আমরা চারজনে ট্রেন এ চেপে বসলাম। কিন্তু তখনও যে গল্প বাকি আছে সেটা পরে বুঝলাম। কারণ আরো এক ঘন্টা late করে গাড়ি শেষ পর্যন্ত প্ল্যাটফর্ম ছাড়লো।


4th March:

সকাল 7টা নাগাদ NJP স্টেশনে এসে পৌছালাম। বাকিরাও আরো কিছু পরে এসে পৌঁছাল। NJP স্টেশন থেকে বেড়িয়ে বাইরে breakfast করে আমরা 7 জনে গাড়ি করে বেড়িয়ে পড়লাম আমাদের 1st destination DEURALI এর উদ্দেশ্যে, যার NJP স্টেশন থেকে distance ছিলো 144km। আন্দাজ 9:30টায় এ পথ চলা শুরু করে বিকেল ৪ টে নাগাদ গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম।

যারা দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে থাকে তারা যখন নিজের ঘরে ফিরে আসে তখন তাদের ঠিক যেমন অনুভূতি হয়ে বাড়ির ফেরার আনন্দে, আমারও ঠিক তেমনই মনে হচ্ছিল। গাড়ি করে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিল আমি যেনো দীর্ঘদিন পর নিজের চেনা জায়গায় ফিরে আসলাম, বাড়িতে ফিরে আসলাম। আবার নিজেকে ভাসিয়ে নিয়ে চললাম এক অজানা পথের বাঁকে, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে।

DEURALI, Nepal এর ILAM district এর একটা ছোট্ট অথচ সুন্দর সাজানো গোছানো গ্রাম। গ্রামের বাড়ি গুলো সবই হয়ে কাঠের নাহলে পাথরের আর খুবই রঙিন বাড়ি গুলোতে Rhododendron, Magnolia, গোলাপ ছাড়াও আরো কত নাম না জানা রঙিন ফুলের টব দিয়ে সাজানো। প্রতিটা বাড়ির সামনে তাদের নিজস্ব খামার আছে। সেখানে মুরগি, ছাগল, শুয়োর ঘুরে বেড়ায়। পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে কেটে গ্রামের মানুষরা চাষাবাদ করে। জায়গায় জায়গায় সর্ষের ক্ষেত। দেখলে মনে হয়ে কেউ সবুজ গালিচার ওপরে হলুদ শাড়ি বিছিয়ে রেখেছে। ছবির মতো সুন্দর একটা গ্রাম। আর তার থেকেও বেশি সুন্দর সেখানকার মানুষ গুলো। তাদের আন্তরিকতা দেখলে মনেই হয়ে না যে বাড়ি থেকে এত দূরে সম্পূর্ণ অজানা একটা দেশে আছি।

Maipokhri Forest


Deurali তে পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যে lunch সেরে আমরা সবাই মিলে অর্থাৎ আমি, Sulagna di, Anurupa di, Barsha, Sourish da, Shantanu da, Dhrubo da আর আমাদের গাইড দাদা বেড়িয়ে পড়লাম এই ছোট্ট গ্রাম টাকে একটু ঘুরে দেখতে। আমরা যে homestay তে ছিলাম তার ঠিক পিছন দিকেই ছিল জঙ্গলের রাস্তা। আমরা ঘুরতে ঘুরতে ঢুকে পড়লাম MAIPOKHRI এর ঘন জঙ্গলের মধ্যে। চারপাশে উচুঁ উচুঁ বিভিন্ন নাম না জানা গাছের সারি, পায়ের তলায় শুকনো পাতার চাদর, ঝোপ ঝাড় এ ভর্তি জঙ্গল টার মধ্যে দিয়ে পায়ে চলার সরু পথ টা ধরে আমরা এগিয়ে চললাম। জঙ্গলের সেই বুনো লতাপাতা আর ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ এবং পাখিদের কিচিমিচির শব্দে মন টা আবার ভরে উঠলো। ধীরে ধীরে সেই পুরোনো মাদকতা টা আবার আমাকে জড়িয়ে ধরতে শুরু করলো। মনে হল এই তো ঠিক এটার জন্যই আমি অপেক্ষা করে ছিলাম। ফিরতে লাগলাম আবার সেই চেনা ছন্দে, যা ঠিক দুমাস আগে Kedarkantha এ অনুভব করেছিলাম।


Natural Chair in the forest of Maipohkri


ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে আমরা আবার ফিরে এলাম homestay তে। ফিরে আসার পর সবার সাথে একটা formal introduction হয়ে যাওয়ার পর Dhrubo da আমাদের next movement কেমন হবে সেটা বলে দিলো। তারপর সেই সন্ধ্যে টা কেটে গেলো Dhrubo da আর গাইড দাদার গানের জমজমাটি আসরের মধ্যে দিয়ে।

এবারেও কিছু নতুন নতুন মানুষদের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেলাম। আগের বারের মতোই এবারেও একজন দিদিকে পেয়ে গেলাম, Sulagna di। একজন cute মানুষ, যে রাস্তার প্রতিটা মোড়ে দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখে বলে "hmmm....ok"। দিদির সাথে আমার একটা আলাদাই বোন দিদি সুলভ বন্ধুত্ব হয়ে গেছিলো। Trekkers Hut এ থাকা হোক বা পথ চলা হোক আমরা একসাথেই ছিলাম। আর দুজনের একসাথে থাকা মানেই ছিল অফুরন্ত হাসির ফোয়ারা। কারণে হোক বা অকারণে একবার হাসি শুরু হলে আমাদের থামায় কার সাধ্যি। Trek এর শেষ দিনে যখন আমি মন খারাপ করে বসে ছিলাম তখন সবাই মিলে আমাকে ধরে দিদির পাশে বসিয়ে দেয়। ব্যাস মন খারাপ ভুলে আবার হাসির রোল শুরু। তবে দিদির ব্যাপারে যে কথাটা না বললেই নয়, সেটা হলো মনে যদি অদম্য জেদ থাকে তাহলে হাজারো বাধা পেরিয়ে নিজের ইচ্ছা বা স্বপ্নকে পূরণ করা যায়। শুধু ইচ্ছাশক্তি টা থাকতে হয়। দীর্ঘ 20 বছর পর শারীরিক অসুস্থতার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করে সে পাহাড়ে ফিরেছিল। দিদি তোমাকে kudos। Sourish da, একজন খুব ভালো এবং মজাদার মানুষ। আমাদের group এর most senior member হলেও তার সাথে আড্ডা ইয়ার্কি করার কিন্তু কোনো কমতি ছিল না। Anurupa di, যার সব সময় "hahaha hehehe" mode on থাকতো, আমাদেরই মতো আর কী, আর এই হাসির ঠেলায় দুবার উল্টেও গেছে। "বাঁশ" এর প্রতি তার এত নিগূঢ় ভালোবাসা দেখে আমরা তো সকলেই অবাক। ভাবছি তার জন্মদিনে একটা "বাঁশ" উপহার দেবো। তবে তার হাতের রান্নার প্রশংসা না করে পারছিনা। Barsha, introvert কিন্তু যখন মুখ খুলতো, তখন মনে হতো যেন bomb blast হলো, এমনই মজার মজার কথা বলত আর আমরা হেসে গড়াগড়ি খেতাম। Trek এর last দিনে পথ চলতে চলতে তো বেচারি আর থাকতে না পেরে বলেই দিলো "কেউ আমাকে entertain করো"। Shantanu da, জ্ঞানভাণ্ডারে পরিপূর্ণ একজন মানুষ আর তেমনই মজাদার। এমন কোনো বিষয় নেই যা সে জানে না। ইয়ার্কি করতেও Sourish dar মতোই তার জুড়ি মেলা ভার। Trek এ সবার আগে resting point এ পৌঁছে যেত আর আমরা যখন শেষ অবধি গিয়ে পৌঁছাতাম ততক্ষনে তার এক ঘুম হয়ে যেত। গোটা Trek টাই এই দুজন মানুষ মাতিয়ে রেখেছিল। সব শেষে যার কথা না বললেই নয় সে হলো Dhrubo da, তার ব্যাপারে বিশেষ কিছুই বলবো না। সবাই তাকে চেনে আর সে সবার কাছেই একজন অতি প্রিয় এবং ভালোবাসার মানুষ। শুধু একটাই কথা বলবো এরপর আর যেই Trek করি না কেন leader হিসাবে আমি তোমাকেই চাইবো।


যাইহোক মুল গল্পে ফিরে আসি । সেই দিন Dinner এর সময় যখন সবাই খেতে বসলাম তখন সামনে থাকা খাওয়ারের দিকে তাকিয়ে সত্যিই খুব অবাক হয়ে গেছিলাম। আশা করি নি এমন কিছু দেখবো বলে। বাড়িতে মা যখন খেতে দেয় তখন খুব সুন্দর করে থালায় গুছিয়ে ভাত, ডাল, তরকারি, ভাজা, মাছের ঝোল সাজিয়ে সামনে রাখে। এখানে এসেও যে কেউ সেভাবেই সুন্দর করে গুছিয়ে আন্তরিকতার সাথে খাওয়াবে সেটা কল্পনাও করি নি। আর প্রত্যেক মুহূর্তে ঠিক মায়ের মতো করেই তারা জিজ্ঞেস করেছিল আর কিছু লাগবে কিনা বা আর একটু ভাত দি? মন টা ভরে গেলো, নাহ্ শুধু খাবার খেয়ে নয়, তাদের আন্তরিক আতিথেয়তা দেখেও।


Nepali Thakali Khana


এইবারে একটু খাওয়ার প্রসঙ্গে আসি। আমাদের সামনে রাখা হয়েছিল authentic Nepali thali, যার নাম হলো THAKALI। একটা বড়ো কাঁসার থালায় এক বাটি উপুড় করা সুগন্ধি চালের গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত, তার ওপর রাখা পাঁপড়, একবাটি গরম ডাল, সাথে রাই শাক, ফুলকপির তরকারি, আলু আচার, টিম্বুরে আচার, খুকুরা ঝোল (দেশী মুরগীর ঝোল) আর স্যালাড। উফ্ ভেবেই জিভে জল চলে এল। আর তার স্বাদও ছিল অতুলনীয়। খুবই সাধারণ ভাবে তৈরি এই খাবার গুলো এখনো যেনো মুখে লেগে আছে।

রাত 9টার মধ্যে খাওয়া শেষ করে আমরা যে যার ঘরে চলে গেলাম শুতে আর খুব স্বাভাবিকভাবেই সারাদিনের journey এর কারণে শোয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম।


5th March:

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে তৈরী হয়ে নিলাম। বাঙালিদের কাছে রবিবার মানেই হল সকালের জলখাবারে গরম গরম লুচি আর সাদা আলুর তরকারি আর তার সাথে এক কাপ গরম চা। তাই breakfast করতে এসে যখন দেখলাম plate এ গরম গরম ধোঁয়া ওঠা লুচি আর আলুর দম সাজানো আছে তখন মনটা খুশিতে নেচে উঠল। পেটুক মানুষ হলে যা হয়ে আর কি। পেট আর মন - দুই ভরে অত্যন্ত তৃপ্তির সঙ্গে জলযোগ শেষ করলাম। তারপর কিছুক্ষনের মধ্যে নিজেদের sack নিয়ে আমরা ready হয়ে গেলাম।


Full Team before starting from Deurali


খুব সম্ভবত সকাল 9টা নাগাদ আমরা trek শুরু করলাম। গন্তব্য ছিল MAIMAJHUWA, যা Deurali থেকে 8km distance এ অবস্থিত। আমাদের পথ চলা শুরু হয়েছিল গ্রামের মধ্যে দিয়ে। তারপর ধীরে ধীরে লোকালয়, বাজার হাট পিছনে ছেড়ে আমরা ফাঁকা জায়গায় এসে পৌছালাম, যেখানে একপাশে ছিল পাহাড়ি উচুঁ দেওয়াল আর জঙ্গল আর একপাশ ছিল খাদের ধারে। রাস্তা টা বেশ চওড়া আর ছোটখাটো অনেক পাথরে ভর্তি। আসলে সেখানে তখন পাহাড় কেঁটে রাস্তা তৈরির কাজ চলছিল। আর কিছুক্ষণ হাঁটার পর বুঝতে পারলাম যে খুব ধীরে ধীরে উচ্চতা বাড়ছে।

সেই শুষ্ক মরুভূমির মতো পথ দিয়ে চলতে চলতে একসময় আমরা ঢুকে পড়লাম সবুজে মোরা জঙ্গলের রাস্তায়। এ এক অন্য অনুভূতি। একে পাহাড় তায়ে ঘন জঙ্গল সব মিলিয়ে এক কেমন যেনো রোমাঞ্চকর মুহূর্ত তৈরি হতে লাগলো। এর আগে একবার পাহাড়ি রাস্তায় চলার অভিজ্ঞতা হয়েছে ঠিকই কিন্তু এই প্রথমবার গভীর পাহাড়ি জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার এক অনন্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলাম। প্রত্যেক মুহূর্তে গায়ে কাঁটা দিতে লাগলো জঙ্গলের সেই রূপ দেখে।


Through the dense forest


জঙ্গল ঘন হলেও সেখানে মানুষের পদধূলি যে পড়েছে সেটা বেশ বোঝা গেলো। দুপাশে উচুঁ উচুঁ গাছের সারি, লতাপাতা, ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ জঙ্গলটার ভেতরে পায়ে চলা সরু পথ টা ধরে হাঁটতে হাঁটতে লক্ষ্য করলাম রাস্তাটা মাটির হলেও বেশ কিছু জায়গায় মানুষ নিজের সুবিধার্থে পাথর দিয়ে রাস্তা তৈরি করে রেখেছে। কিন্তু তা সত্বেও প্রকৃতির নিজস্ব কিছু কারুকার্য অবশ্যই ছিল। কারণ সে মানুষের থেকেও বড় কারিগর।

দুপুর 12:30 টা নাগাদ আমরা এসে পৌছালাম TODKE WATERFALL এর সামনে। 85 মিটার উচুঁ এই waterfall টা ছিল আমাদের প্রধান আকর্ষণ। সেই জলপ্রপাতকে কেন্দ্র করে কিছু ঘর মানুষের বসতি গড়ে উঠেছিল। শুনতে খুব অদ্ভুত লাগলেও আমি এই প্রথমবার কোনো waterfall দেখলাম। একেবারে পাহাড়ি ঝর্না। ছবিতে অনেক বার দেখে থাকলেও চাক্ষুষ করলাম এইবার। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। ছুট্টে চলে গেলাম একেবারে ঝর্নার নিচে, তার জলধারায় পথ চলার সমস্ত ক্লান্তি কে মুছে ফেলতে। আর সেও অতি যত্নে তার স্নিগ্ধ পরশ ছুঁয়ে দিয়ে আমার সমস্ত ক্লান্তিকে বয়ে নিয়ে চলে গেলো। এক প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়লো গোটা দেহ মন জুড়ে।


Standing infront of "Todke Jharna"


সেই ঝর্নার পাদদেশে বসে আমরা Dhrubo dar হাতে তৈরি "পাহাড়ি Maggie" খেয়ে lunch সেরে ফেললাম। এই "paharwali Maggie" এর মধ্যে একটা আলাদাই ব্যাপার আছে। এই রকম Maggie যতই বাড়িতে বানানোর চেষ্টা করি না কেন সেই স্বাদ টা যেনো কিছুতেই আসে না। Kuch to secret hai isme.


Pahadi Maggi


যাই হোক lunch সেরে আমরা আবার পথ চলা শুরু করলাম। Todke waterfall থেকে কিছুটা দূরেই ছিল নেপালের সেই পরিচিত Suspension bridge। সেই bridge দিয়ে আমি একরকম নাচতে নাচতে হেঁটে গেছি।

Bridge cross করে ওপাশে পৌঁছে দেখলাম সেখান থেকে পাথরের সিঁড়ি শুরু হয়েছে। কোথাও খুব উচুঁ আবার কোথাও ছোট খাটো সিঁড়ি পেরিয়ে সামনের দিকে এগোতে লাগলাম। নেপাল যে সুন্দর একটা দেশ সেটা শুনেছিলাম কিন্তু এবারে তার সৌন্দর্য চাক্ষুষ করে আমি মুগ্ধ। ছোট ছোট রঙিন কাঠের বাড়ি, নাম না জানা রঙবেরঙের ফুলের মেলা আর প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্য, মনে হচ্ছিল ভগবান স্বয়ং নিজের হাতে অনেক ধৈর্য্য ধরে এই সৃষ্টি রচনা করেছেন আর নিজের রঙের ডালি খালি করে দিয়ে ছবি একেঁছেন।


Suspended Bridge, with "Todke Jharna" to the far

জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সেই ছোটো বড়ো পাথুরে সিঁড়ি পেরিয়ে এক সময়ে আমরা আবার লোকালয়ে এসে পড়লাম। বিকেল 5টা নাগাদ আমরা Maimajhuwa এর homestay তে পৌঁছে গেলাম। ছবির মতো সুন্দর একটা জায়গা আর তার থেকেও সুন্দর ছবির মতো একটা বাড়ি। সেটাই ছিল সেদিনের মতো আমাদের থাকার আশ্রয়। বলে না বাড়ির পরিবেশ অনেক সময় দৈহিক ও মানসিক ক্লান্তিকে কিছুটা নিরাময় করে, homestay এর ভেতরে ঢুকে আমার অবসন্নতা অনেকাংশে দূর হয়ে গেল।

সারাদিনের একটানা নিরবচ্ছিন্ন পথ চলার পর আমরা সকলেই যখন ক্লান্ত বিধ্বস্ত ঠিক তখনই আমাদের সামনে টেবিলে সাজিয়ে দেওয়া হল গরম গরম পকোরা আর ধোঁয়া ওঠা গরম চা। আহ্ পরিতৃপ্তির সাথে সেগুলো গলধঃকরণ করে আমরা 6 জন মিলে সেই দিনের সন্ধ্যেটা জমাটি আসরের মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে দিলাম।

প্রতিদিনই খাওয়ারের টেবিলে আমাদের জন্য থাকতো নিত্য নতুন চমকপ্রদ সুস্বাদু খাবার আর সেই খাবার উদরস্থ করে আমরা কম্বলের তলায় সেঁধিয়ে যেতাম।


Tibetan bread

6th March:

সকালে Tibetan Bread, আলুর দম আর গরম চা সহযোগে breakfast সেরে আমরা ৮টা নাগাদ Maimajhuwa কে বিদায় জানিয়ে আবার বেড়িয়ে পড়লাম 8km দূরে অবস্থিত GORUWALEYBHANJYANG এর উদ্দেশ্যে। পথটার কিছুটা ছিল ঢেউ খেলানো open meadow আর বাকি রাস্তাটুকু ছিল জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। সেই open meadow দিয়ে পথ চলার ঘন্টা দেড় দুই পর আমাদের সবারই পেটে ছুঁচোয়ে ডন মারতে শুরু করেছিল, অন্তত আমার তো করছিল। তাই একটা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় বসে সবাই কিছু খেয়ে নিলাম।



এই trek এ সবথেকে মজার ব্যাপার ছিল ঘন ঘন খিদে পাওয়া, যেটা কিনা আমার আগেরবার হয় নি। যদিও Dhrubo dar কথা অনুযায়ী সেটা খুবই ভালো ব্যাপার। তাই পথ চলতে চলতে যখনই খিদে পাচ্ছে তখনই ব্যাগ থেকে টুক করে খাবার বের করে পেট পুজো টা সেরে ফেলছি। আর এরকম ভাবেই পথ চলতে চলতে একসময় খোলা আকাশের নিচে বসে সবাই মিলে মধ্যাহ্ন ভোজন টা সেরে ফেললাম, যা Maimajhuwa থেকে বেরোনোর সময় pack করে দেওয়া হয়েছিল।



সেদিন সকালে weather একটু ভালো থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘন কুয়াশা আমাদের ঘিরে ধরতে লাগলো আর সেই সঙ্গে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া কাপুনি ধরিয়ে দিল। চোখের সামনে দেখতে লাগলাম কীভাবে কুয়াশার দল হাওয়ার দ্বারা চালিত হয়ে নীচ থেকে ওপরের দিকে উঠে নিমেষের মধ্যে পুরো জায়গাটাকে ঢেকে দিল। তাও যে কুয়াশা একটানা ছিল তা নয়। কখনো কখনো কুয়াশার চাদরকে সরিয়ে দূরের পাহাড়ের সারি উঁকি দিচ্ছিল, যেন আমাদের সাথে লুকোচুরি খেলতে পেরে তারা আহ্লাদিত।


Walking through the dense forest and fog


কখনো কুয়াশা তো কখনো চড়া রোদ - এই দুই কে সঙ্গী করে আমরা উন্মুক্ত জমি ছেড়ে একসময় পৌঁছে গেলাম দুপাশে জঙ্গলের রাস্তায়। এখানে জঙ্গল খুব একটা বেশি ঘন ছিল না। রাস্তাটার একপাশ সোজা উঠে গেছে উপরের দিকে আর একপাশ ঢালু হয়ে নীচের দিকে ঠিক কতদূর অবধি গেছে তা বোঝার কোনো উপায় ছিল না, কারণ নীচটা তখন ঘন কুয়াশায় মোড়া ছিল। আর দুপাশেই ছিল বড় বড় বৃক্ষরাজির সমাহার। তারা সদর্পে আকাশের দিকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। যেন আমাদের বোঝাতে চাইছে তোমরা এসেছ আমার রাজ্যে, তাই নিজের সীমা লঙ্ঘন না করে, নিজের অহং বোধকে চূর্ণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাও, আমরা আছি তোমাদের মাথার ওপর, শ্রান্ত শরীরে প্রশান্তি দেওয়ার জন্য। আর তারই সাথে নানা ধরনের পাখপাখালির ডাকে জঙ্গল মুখরিত।

সেই জঙ্গলের পথকে পিছনে ফেলে বেলা 3টে নাগাদ পৌঁছে গেলাম Goruwaleybhanjyang এর কাঠের তৈরি ছোট্ট অথচ সুন্দর একটা Hut এর সামনে। Hut টা ছিল চারদিক উন্মুক্ত ঘাস জমির ওপরে। নীল রঙের কাঠের তৈরি hut টা দেখে মনে হচ্ছিল কোনো doll house। সেখানে পৌছতে না পৌঁছাতেই চলে এলো গরম গরম চা। Hut এর পিছন দিকে খোলা জায়গাটা তে বসে সবাই মিলে চা আর biscuit খেতে খেতে খোশমেজাজে গল্প করতে লাগলাম। সেখানে ঠান্ডা টা একটু বেশিই ছিল। খোলা জায়গা হওয়ার কারণে হুহু করে হাড় কাপানো ঠান্ডা হাওয়া বইছিল। কিন্তু প্রকৃতির রূপ দেখে মনে হচ্ছিল তিনি কোনো কারণবশত আমাদের প্রতি বিরূপ। তাই নিজেকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে রেখেছেন।


Goruwalebhanjyang Trekkers Hut


সন্ধ্যে নামতে না নামতে হওয়ার দাপট যেনো আরো বেড়ে গেলো। সেই অবস্থায় আর বাইরে বসে থাকা টা উচিত হবে না দেখে আমরা সবাই hut এর ভেতরে গিয়ে বসলাম। সেইদিনের সন্ধ্যে টা কেটে গেলো ভূতের গল্পের আসর বসিয়ে।

রাতের dinner এর পর Dhrubo da চিরাচরিত ভাবে পরের দিনের movement নিয়ে আলোচনা করে নিল। যেহেতু পরের দিন টা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন, তাই দেরি না করে সকলে dinner সেরে যে যার মতো শুতে চলে গেলাম।

সেদিন রাতের আকাশে কুয়াশার প্রলেপকে সরিয়ে চাঁদ মামার আবির্ভাব ঘটেছিল। দেখে মন টা খুশিতে ভরে গেছিলো। মনে হয়েছিল যে যাক প্রকৃতির বিরূপতা তাহলে কেটে গেছে। পরিস্কার ঝলমলে তারা ভরা আকাশ দেখে আমরা ঘুমোতে গেলাম।

7th March:

ভোর 3:30 টে নাগাদ আমরা সকলে ঘুম থেকে উঠে ready হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। গন্তব্য ছিল 4km এর distance এ CHINTAPHU TOP আর উদ্দেশ্য ছিল সূর্যোদয় দেখা। চাঁদের আলোকে সঙ্গী করে বেরোলেও কিছুদূর চলার পর তিনি মেঘের আড়ালে মুখ লুকোলেন। অগত্যা তখন head torch ছাড়া আর কোনো গতি ছিল না। উন্মুক্ত ঘাস জমির মধ্যে দিয়ে পায়ে চলার পথটা ছিল ছোটো বড়ো অনেক পাথরে ভর্তি। অন্ধকারের মধ্যে সাবধানে পা ফেলে না চললে পা মচকে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। সেই পাথুরে রাস্তা দিয়ে পথ চলতে চলতে একসময় আমরা সেই পরিচিত জঙ্গলের রাস্তায় ঢুকে পড়লাম। রাতের অন্ধকারে দুপাশের বড়ো বড়ো গাছ, বাঁশঝাড় গুলোকে দেখে অজান্তেই শিউরে উঠলাম। এক হাত দূরত্বে কি আছে যখন দেখা যায় না, torch এর আলো যেখানে ভালো ভাবে পৌঁছায় না তখন একটু ভয়ে লাগা টা স্বাভাবিক। তার ওপর আবার আমার একটু ভূতের ভয়ে আছে। তাই বারবার মাথা ঘুরিয়ে torch এর আলোতে দেখার চেষ্টা করছিলাম জঙ্গলের ভেতর টা। কিন্তু কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। যতই এগোতে লাগলাম বন ও ততই গভীর হতে লাগলো।


Full Moon on the way to Chintaphu Top


জঙ্গলের মধ্যে রাস্তা টা দুভাগে বিভক্ত ছিল। একটা ছিল প্রকৃতির তৈরি মাটির রাস্তা আর একটা ছিল মানুষের তৈরি পাথরের সিঁড়ির রাস্তা। আমরা মাটির রাস্তা ছেড়ে সিঁড়ির রাস্তা ধরলাম। মাটির রাস্তা টা যেদিক দিয়ে গেছে সেদিকে একদিকে জমি ঢালু হয়ে নিচের দিকে নেমে গেছে আর একদিকে পাহাড়ি দেওয়াল উপরের দিকে উঠে গেছে প্রায় খাড়াই ভাবে। আর দুপ্রান্তেই উচুঁ উচুঁ গাছের সারি। আর সিঁড়ির রাস্তা টা খাড়াই ভাবে ঢুকে গেছে গভীর জঙ্গলের মধ্যে। যার এক্কেবারে গা ঘেসে বড়ো বড়ো বনস্পতি আর বাঁশঝাড়ের ভিড়।

আমাদের 8 জনের দলটির মধ্যে 5 জন একটু আগে এগিয়ে গিয়েছিল। আর পিছনে ছিলাম Sulagna di, আমি আর Dhrubo da। আমরা ধীরে ধীরে আমাদের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলেছিলাম। তবে বেশ অনেকটা এগোনোর পর দেখলাম আকাশের অবস্থা মোটেও সুবিধার নয়। কিছুক্ষণ পরই Dhrubo da নেমে এসে বললো আর এগোনো ঠিক হবে না। কোনো view পাওয়া যাবে না। ফিরে যাওয়াই ভালো, আকাশ পুরো মেঘে ছেয়ে গেছে। অগত্যা এই রকম অবস্থায় Trek leader আর guide এর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। একরাশ মন খারাপ নিয়ে আমরা আবার নিচের দিকে নামা শুরু করলাম। নিচে hut এর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে লক্ষ্য করলাম অন্ধকারের চাদর সরিয়ে আকাশ পরিষ্কার হচ্ছে আর মেঘেদের আড়াল থেকে সূর্যদেব উঁকি মারছেন। তবে ওই টুকুই। একবার দেখা দিয়েই আবার মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়ছেন। লুকোচুরি খেলছেন আমাদের সাথে।



6:45 টা নাগাদ আমরা আবার hut এ ফিরে এলাম। Chintaphu top থেকে সূর্যোদয় দেখতে না পারলেও একটা আশা ছিল যে Aahl থেকে হয়তো পারবো। তাই মন খারাপটা খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। Breakfast করে নিজেদের sack নিয়ে ready হয়ে গেলাম। দোল পূর্ণিমার পূণ্য লগ্নে নতুন আশা নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করলাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্যস্থল Aahl এর দিকে।

কয়েক ঘর নিয়ে গড়ে ওঠা ছোট্ট গ্রাম Goruwaleybhanjyang কে বিদায়ে জানিয়ে যখন আমরা ওপরের দিকে উঠতে লাগলাম তখন কিছু দূর যেতে না যেতেই বাঁদিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণের জন্য চোখে ধাঁধা লেগে গেলো। মনে হলো যা দেখছি তা আদৌ সত্যি নাকি চোখের ভ্রম। তাই Dhrubo da কে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হলাম যে নাহ্ যা দেখছি তা 100 শতাংশ সত্যি। দূরের সাদা মেঘের মতো চুঁড়া কে দেখে বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হয়ে গেলাম। Mount Kumbhakarno. Sleeping budhha range এর মাথার দিকের অংশ। যাক একবার হলেও কিছুটা তো দেখতে পেলাম।



এরপর আমরা এক পা এক পা করে Singalila National Park এর nepal range এর ভেতরে ঢুকে পড়লাম। Last দুদিন ধরে জঙ্গলের যে রূপ আমরা দেখে এসেছি তার থেকেও অনেক বেশি গভীর আর ঘন সবুজে ঘেরা এই জঙ্গলের রূপ আমাকে বাকরূদ্ধ করে দিয়েছিল। আর সেখানকার রাস্তাটাও ছিল বেশ চিত্তাকর্ষক।

কিছুক্ষণ মাটির রাস্তা দিয়ে চলার পর শুরু হলো সিঁড়ি ভাঙ্গা। সেই সিঁড়ির যেনো কোনো শেষ নেই। একটার পর একটা পাথর বসিয়ে বানানো সিঁড়ির সংখ্যা ছিল অগুনতি। প্রথম দিকে কিছু দূর অন্তর অন্তর সিঁড়ি থাকলেও যত ভেতরে ঢুকতে থাকলাম ততোই মাটির রাস্তার জায়গা দখল করে নিল ওই সিঁড়ি। একটা সময়ের পর মনে হতে লাগলো আমরা যেনো অনন্ত কাল ধরে শুধু সিঁড়ি দিয়ে উঠেই চলেছি, যার কোনো শেষ নেই। মাঝে মাঝে অবশ্য কিছু কিছু জায়গায় সিঁড়ি শেষ হয়ে মাটির রাস্তাও ছিল। কিন্তু ব্যাস ওই টুকুই, কারণ তারপর আবার সিঁড়ির পথ শুরু হচ্ছিল। বিষয়ে টা যে খুব খারাপ লাগছিল তা নয়। উল্টে আমার কাছে ব্যাপার টা বেশ interesting লেগেছিল। কারণ অত ঘন জঙ্গলের ভেতরে এরকম ভাবে পাথর বসিয়ে রাস্তা তৈরি করা খুবই কষ্টসাধ্য বিষয়।

সিঁড়ির রাস্তাটা ধীরে ধীরে খাড়া ভাবে ওপরের দিকে উঠছিল। আর তার চারপাশে ছোটো বড়ো বনস্পতির ভীড়। Pine, Oak, Chestnut, Rhododendron, Magnolia সহ আরো কত রকমের নাম না জানা গাছের সমাহার সেখানে ছিল। তার সাথে কত রকমের পাখির কলকাকলি আর ঝর্নার শব্দ, গাছের পাতার মধ্যে দিয়ে হওয়া চলাচলের বিচিত্র শব্দ, শুকনো পাতার খসখসে আওয়াজ আর নিজেদের boot এর আওয়াজের ফলে জঙ্গলের নৈঃশব্দ্য চূর্ণ হচ্ছিল। কিন্তু সেই শব্দ গুলো যেনো কেমন একটা নেশা ধরিয়ে দিতে লাগলো। কেমন যেনো একটা ঘোর লাগা অবস্থা তৈরি হতে থাকলো। উল্টে ওই শব্দ গুলো থেমে গেলে তখন কেমন জানি একটা অস্বস্তি হতো। তখন আবার চুপ করে সেই শব্দ গুলোকে শোনার চেষ্টা করতাম, অনুভব করার চেষ্টা করতাম।

ছোটো খাটো পাহাড়ি ঝর্ণা, ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ এবং জঙ্গলের বৈচিত্র্যময় রূপকে উপভোগ করতে করতে আমরা 8জন এগোতে থাকলাম। প্রতিটা বাঁকের সাথে সাথে মনে হতে লাগলো জঙ্গলের রূপও যেন পাল্টে পাল্টে যাচ্ছে। কখনো একটু পাতলা হচ্ছে তো কখনো ঘন। কিছু কিছু স্থানে পাহাড়ি দেওয়াল গুলো এমন ভাবে সামনের দিকে ঝুঁকে ছিল যেনো দেখে মনে হচ্ছিল একটু ঝড়ো হাওয়া দিলেই সেটা হুড়মুড়িয়ে পড়ে যাবে। কোথাও কোথাও ছোটো খাটো পাহাড়ি জলধারা নেমে এসে সেই স্থান টাকে করে তুলেছিল কর্দমাক্ত। পায়ের তলায় শুধুই যে শুকনো পাতার আস্তরণ ছিল তা নয়, কখনো কখনো জলধারার ওপর দিয়েও যেতে হয়েছে। মাঝে তো একবার আমি সেই কাঁদায় পরে যাচ্ছেতাই কান্ড করে বসলাম। গোটা বাংলা যখন আবীর নিয়ে রঙের খেলায় মেতে উঠেছে তখন আমি কাঁদা মেখে বসে আছি।


On the way to Aahl


রাস্তাটা যে পুরোটাই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গেছিলো তা কিন্তু নয়। কখনো কখনো জঙ্গল পেরিয়ে খোলা ঘাস জমিতে এসে পড়ছিলাম। কিন্তু সিঁড়ির রাস্তা সেখানেও ছিল। তাই মাঝে মাঝে সিঁড়িকে এড়িয়ে চলতে আমরা সেই খোলা ঢেউ খেলানো ঘাস জমির ওপর দিয়েই হেঁটে যাচ্ছিলাম। খেয়াল করলাম আমাদের চারপাশ টা যে খুব পরিষ্কার তা নয়, একটা পাতলা কুয়াশার চাঁদর সর্বদাই চারদিক ঘিরে রেখেছে। সেইরকম পরিবেশে অপেক্ষাকৃত একটু উঁচু জমিতে বসে lunch সেরে ফেললাম।

খাওয়া শেষ করে সবেমাত্র আমরা আবার পথ চলা শুরু করেছি তখনই দেখলাম মুহূর্তের মধ্যে সেই পাতলা কুয়াশার আস্তরণ টা ঘন হয়ে চারপাশটা ঢেকে দিল আর এমন ভাবে আশপাশটা কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে গেল যে এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টা অবধি নজরের বাইরে চলে গেলো। কিন্তু সেই অবস্থাও আমাদের দমিয়ে রাখতে পারে নি। এবারেও প্রকৃতি আমাদের দিকে challenge ছুড়ে দিচ্ছিল, তবে সেটা অন্য রকম ভাবে। কিন্তু তাতে আমরা কেউই দমে না গিয়ে সেই challenge কে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম।

প্রথম দিকে সব ঠিক থাকলেও একটা পর্যায়ের পর শরীর মন উভয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করলো। পা যেনো আর চলতে চায়ে না। মন বলে এখানেই বসে পড়ি আর এগিয়ে যাওয়া টা সম্ভব না। একবার তো পরে গিয়ে কাঁধে লাগলো। কিন্তু সামনে এগোনো ছাড়া তো আর কোনো উপায়েও নেই। এখানেই পাহাড়ের সঙ্গে জীবনের এক অদ্ভুত সাদৃশ্য আছে। বসে বসে এইসবই ভাবছি তখনই Dhrubo da এসে বললো "এভাবে বসে পড়লে হবে, এত টা পথ ভালো হাঁটলে আর এখন হার মেনে নিচ্ছো? ওঠো আর বেশি পথ বাকি নেই। ওপরে গেলে তবেই তো Kanchanjungha কে দেখতে পারবে।" সেই motivation power, হাত পা ঝেড়ে উঠে পড়লাম।

সিঁড়ি দিয়ে ওঠাটা এবার একরকম অসম্ভব হয়ে যাচ্ছিলো। যদিও ওটাই একদম সোজা রাস্তা ছিল। কিন্তু আমাদের অবস্থা খুব একটা ভালো না দেখে Dhrubo da আর সেই রাস্তা না ধরে, ঘুর পথ ধরলো। সময়টা একটু বেশি লাগলেও আমরা ওই ঘুর পথ ধরেই ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে গিয়ে Aahl এ পৌঁছালাম।

অবশেষে 14km পথ আর প্রায় হাজার তিনেক সিঁড়ি উঠে সন্ধ্যে 5:30 টা নাগাদ আমরা শেষ পর্যন্ত 3636 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত Aahl এ এসে পৌঁছালাম। ক্লান্ত শরীরে আমরা সকলে trekkers Hut এ এসে বসলাম। সেখানে হাওয়ার দাপটে হাড়ে হাড়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিল। গরম গরম coffee খেয়ে সবে একটু ক্লান্ত শরীর টাকে কম্বলের তলায় ঢুকিয়েছি তখনই Shantanu da এসে বললো "আরে বাইরে চল, আকাশ তো হোলি খেলছে। দেখবি চল।" ব্যাস ঠান্ডা আর ক্লান্তি ভুলে দৌড় লাগালাম। আহা এ যেনো এক নৈসর্গিক দৃশ্য। সূর্যাস্তের রক্তিম আভা তখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। সূর্যদেব ততক্ষণে অস্তাচলে গেছেন কিন্তু তখনও তার আলোর ছটা এতটুকুও মলিন হয়ে যায় নি। চেয়ে রইলাম সেই দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে।


Colourful dusk from Aahl


সেদিনের সন্ধ্যাটা ছিল মনে রাখার মতো। আকাশে রঙের খেলা দেখে যখন hut এ ফিরে আসছিলাম তখন Dhrubo da দের ঘর থেকে Ukulele এর টুংটাং আওয়াজ পেয়ে গান শোনার লোভ সামলাতে না পেরে "আসবো কিনা" জিজ্ঞেস করে ঢুকে পড়লাম। তারপর আর কি শুরু হয়েছিল Dhrubo dar solo দিয়ে, মাঝে হলো duet (Dhrubo da আর গাইড দাদার), পড়ে এলো chorus আর শেষ হলো Barshar গান দিয়ে। সন্ধ্যে টা গানের আসরে একবারে "জমে ক্ষীর" হয়ে গেছিলো। এরকম একটি জমাটি আসর আমাদের সকলের সারাদিনের পথ চলার ধকলকে শুষে নিয়েছিল। ক্লান্তির লেশমাত্র ছিল না আর তখন।

8th March,

ভোর 4 টে থেকে জেগে বসে আছি কখন দিনের আলো ফুটবে আর আমি সূর্যোদয় দেখতে যাবো সেই আশায়। শুয়ে শুয়েই শুনতে পারছি বাইরে হওয়ার শো শো শব্দ। যেনো মনে হচ্ছিল প্রবল বেগে ঝড় উঠেছে, এমনই তার দাপট।

যদিও Dhrubo da আমাদের বলেছিল 5:45 এ উঠে view point এ যাবো। কিন্তু 5:30 টা বেজেছে কি বাজে নি অমনি আমি আর Sulagna di ওদের room এ গিয়ে knock করতে শুরু করে দি। Shantanu da ততক্ষণে উঠে ready হয়ে গেছিলো। তাই আর এক মুহূর্তও দেরি না করে আমরা 3জনেই প্রায় ছুটে চলে গেলাম view point এ। এই view point টা ছিল hut এর একদম পেছনেই। তাই খুব একটা কষ্ট করতে হয় নি আমাদের সেখানে পৌছানোর জন্য।

বাইরে বেরিয়ে দেখি অনেকেই ততক্ষনে উঠে পড়েছে এবং hut থেকে কিছুটা দূরে আর একটা view point এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে sunrise দেখবে বলে। আমরা সেই দিকে না গিয়ে hut এর পিছন দিকেই গেলাম। সেখানে আমরা 3জন ছাড়া আর কেউ ছিল না। মনে মনে ভাবলাম যাক একদিকে ভালোই হয়েছে এদিকটায় ভীড় নেই।

কিন্তু সেখানে গিয়ে মন টা খারাপ হয়ে গেল। কারণ সামনে তাকিয়ে শুধু সাদা মেঘের জটলা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছিল না। কোথায় কাঞ্চনজঙ্ঘা? কোথায় Sleeping budhha? আর কোথায় ই বা mount Everest? তবে কি এবারেও তার দেখা পেলাম না? Chintaphu top এ তো পৌঁছাতে ব্যর্থ হলাম, তাই যাও বা একটা আশা ছিল Aahl এ এসে ওনার দেখা পাবো সেই আশাতেও মেঘের দল বালতি বালতি জল ঢেলে দিলো। একরকম উদাস হয়ে যখন ভাবছি hut এ ফিরে যাই ঠিক তখনই Sulagna di বলে উঠলো "আরে Sriparna সামনে তাকিয়ে দেখ একবার।"

দেখলাম চেয়ে আর সঙ্গে সঙ্গে আমি যেনো কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম। মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্য ঘন মেঘের চাদর সম্পূর্ণ সরিয়ে উনি আমাদের দেখা দিলেন। কি অপার্থিব ধরনের সৌন্দর্য তার, তাই তিনি নিজেকে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিলেন এতক্ষন। চোখ যেনো ধাঁধিয়ে যায় সেই রূপে। তবে শুধু ওই কয়েক মুহূর্তের জন্যই, তারপর উনি আবার নিজেকে মেঘেদের আড়ালে লুকিয়ে ফেললেন। তখন সেই গান টা মনে পড়ে গেলো "কেনো মেঘ আসে হৃদয়ও আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না। মাঝে মাঝে তব দেখা পাই চিরদিন কেনো পাই না"। কিন্তু ওই এক মুহূর্তের জন্যই হোক না কেন শেষ পর্যন্ত তিনি দেখা তো দিয়েছেন, হতাশ তো করেন নি।


Majestic Sleeping Buddha


ওই দিকে তখন আলোর খেলা শুরু হয়ে গেছে। মেঘেদের মধ্যে দিয়ে সেই লালচে আভা বিচ্ছুরিত হয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। সূর্যদেব খুব সন্তর্পনে পাহাড়ের আড়াল থেকে বেরিয়ে মেঘেদের মধ্যে দিয়ে উঁকি দিতে শুরু করেছেন। সেই ছবি খুব সহজে camera এ ধরা দেয় না। দু একবার চেষ্টা করলাম তাকে ক্যামেরাবন্দি করার কিন্তু শেষ অবধি ব্যর্থ হয়ে রণে ভঙ্গ দিলাম। থাক তোমার ওই আলোর খেলা আমি নাহয় নিজের চর্ম চক্ষুতেই বন্দী করে রাখি। অথচ অন্য দিকে মেঘাচ্ছন্ন অবস্থাটা কিছুতেই কাটছে না।

আমি একটা পাথরের ওপরে গিয়ে বসে পড়লাম। তখন হওয়ার যা তেজ তাতে সবকটা layers পড়ে থাকা সত্বেও অন্তরাত্মা অবধি কেঁপে যাচ্ছে। ঠক ঠক করে কাঁপছি তখন। তবে সেই হওয়ার দাপটেই একটু একটু করে মেঘের পর্দা সরে যেতে লাগলো। আর তা সরে যেতেই চোখে পড়লো সারা শরীরে শিহরন জাগানো সেই অপার্থিব ধরনের অভূতপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য, যা দেখার জন্য মনটা ছটফট করছিল।

কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর থেকে মেঘের পরত টা সবে মাত্র একটু সরেছে তখনই দেখলাম সূর্যের প্রথম রশ্মি টা এসে পড়লো তার গায়ে। সেই অবিশ্বাস্য রকমের অপার্থিব দৃশ্য টা কেমন যেনো সর্বাঙ্গ জুড়ে রোমাঞ্চের সৃষ্টি করলো। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। সেই সোনালী আভায়ে সে নিজেকে এমন ভাবে রাঙিয়ে তুললো যে তাকে দেখে মনে হচ্ছিল "সোনার পাহাড়"। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুধু চেয়ে রইলাম সেই দিকেই। সেই দৃশ্যের বর্ণনা করা আমার পক্ষে অসম্ভব। এই জন্যই হয়ে তো কাঞ্চনজঙ্ঘা কে বলা হয়ে "The Mountain of Hidden Gems".

এক সময়ে মেঘ সরে গিয়ে সম্পূর্ণ range টা চোখের সামনে ধরা দিলো। "কাঞ্চনজঙ্ঘা , কুম্ভকর্ণ ও পান্দিম", এই তিনের মিলনই হলো "Slepping Budhha"। দূর থেকে দেখে মনে হবে কেউ যেনো পেটের ওপর হাত রেখে শুয়ে আছে। বরফের চাদরে মোড়া Slepping Budhha কে দেখে আমি বাকশক্তি হারিয়ে ফেললাম। যে ঠান্ডা হওয়ার দাপটে কিছুক্ষণ আগেও অবধি আমি কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম সেই হাওয়া শরীরে হাজারটা কামড় বসালেও আমার ঠান্ডার অনুভূতিটা যেনো কোথায় হারিয়ে গেলো। আমি পাথরের ওপর বসে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে রইলাম সেই দিকে আর কেঁদে ফেললাম নিজের অজান্তেই।


Kanchenjungha Massif


শায়িত বুদ্ধের ওপর তখন চলছিল রঙের খেলা। আসলে সেই দিনই তো ছিল অবাঙালিদের "Holi". আর তাই সূর্যোদয়ের রঙিন আভায় সে রঙ খেলতে লাগলো। সেই খেলা দেখার জন্য একে একে মানুষের ভীড় বাড়তে থাকলো। আমাদের group এর বাকিরা যে কখন এসে পাশে দাঁড়িয়েছিল আমি খেয়ালও করি নি। সবাই যখন তার সেই রূপকে camera বন্দী করতে ব্যস্ত তখন আমি অপলক দৃষ্টিতে তার রূপকে নিরীক্ষণ করে যাচ্ছিলাম। ভুলে গেছিলাম আমি কোথায় আছি, কাদের সাথে আছি। ভুলে গেছিলাম তার আগের দিন অতখানি পথ অতিক্রম করে ক্লান্ত শরীরে সেই জায়গায় এসে পৌঁছেছি। ভুলে গেলাম এই বিশ্ব চরাচর কে। সেই মুহূর্তে যেটা আমার চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছিল, যাকে একমাত্র সত্যি বলে মনে হচ্ছিল তা হলো ওই দূরের চির তুষারাবৃত পর্বতশ্রেণী "Sleeping Budhha".

Chamlang, Lhotse, Everest, Makalu Chomolanzo


একটা সম্পূর্ণ ঘোরের মধ্যে ছিলাম, কারণ জীবনে এই প্রথমবার আমি এরকম অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলাম। প্রথমবারের জন্য আমি কাঞ্চনজঙ্ঘা কে দেখলাম, Sleeping budhha কে দেখলাম। দেখলাম তার থেকে একটু বাঁ দিকে থাকা Everest, Makalu, Lhotse, Nuptse, Chamlang আর Chomolanzo কে। আগের দিন এই দৃশ্য দেখতে না পাওয়ার কষ্ট টা সম্পূর্ণরূপে দূর হয়ে গেলো। একরাশ ভালো লাগা সারা শরীর আর মন জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো।

এভাবে ঠিক কতক্ষণ ছিলাম বলতে পারবো না কারণ তখন আর সময়ের আন্দাজ আমার ছিল না। Dhrubo dar ডাকে চটক ভাঙলো। ফেরার জন্য বলছিলো। কিন্তু আমি জেদ ধরে বসলাম আরো কিছুক্ষন সেখানে থাকবো বলে। "বেশিক্ষণ থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে, খুব হাওয়া দিচ্ছে। Breakfast করে আবার আসবে না হয়ে" কথাটা বলে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে Dhrubo da আমাকে একরকম টেনে নিয়ে চলে গেলো hut এর দিকে। বাকিরা অনেকক্ষণ আগেই room এ ফিরে এসেছিল।

Room এ এসে বসার সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো আমার সারা শরীরটা যেনো বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে। প্রচন্ড কাঁপুনি দিতে লাগলো। যে ঠান্ডা টা এতক্ষন ধরে অনুভূত হয়ে নি সেটাই এখন জাঁকিয়ে বসেছে। গরম গরম coffee খেতেই অনেকখানি আরাম বোধ করলাম। তারপরেই খেয়াল করলাম আরে তখন আমি এতটাই বিভোর ছিলাম যে একটা photo অবধি আমি তুলি নি। Sulagna di কে সঙ্গে নিয়ে আমি আবার ছুটলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা, sleeping budhhar photo তুলতে।


Girls Power(From Left:- Anurupa, Sulagna, Sriparna, and Barsha)


বলে না ভালো সময়ে চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই কেটে যায়। আমারও তখন ঠিক সেটাই মনে হচ্ছিল। সময়ে কিন্তু তার গতিতেই চলতে থাকলো। ঠিক 9টা নাগাদ breakfast করে নিজেদের sack গুছিয়ে আমরা ready হয়ে গেলাম আমাদের এই অভিযানের শেষ গন্তব্য এর উদ্দেশ্যে। Sirikhola ই ছিল শেষ গন্তব্য। সময়ে টা যে কিভাবে জলের স্রোতের মতো বয়ে গেলো তা শুধু আমি কেনো আমরা কেউই বুঝতে পারলাম না।

Aahl থেকে Sirikholar দূরত্ব টা ছিল 14km। এবারে আর কোনো সিঁড়ি ছিল না সেই রাস্তায়। আমরা 9টা নাগাদ যাত্রা শুরু করে 10টার মধ্যে Sandakphu পৌঁছে গেলাম। এই পর্যন্ত পুরো রাস্তাটার চারপাশে ছিল নজরকাড়া মনোরম দৃশ্য। সেই দিন কুয়াশা আর মেঘের প্রলেপ সরিয়ে দিয়ে দূরের পর্বতমালা আমাদের কাছে ধরা দিয়েছিল। আর তাদেরও পেছনে সজাগ প্রহরীর মতো আমাদের সাথে সাথে চলেছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা। রাস্তার দিকে চোখ রেখে চলবো নাকি তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

এক সময় Sandakphu থেকে আমরা Singalila region এর dense forest এর মধ্যে ঢুকে পড়লাম। এবড়ো খেবড়ো রাস্তাটার দুপাশে ছিল সবুজে মোড়া ঘন জঙ্গল। তবে কখনো কখনো জঙ্গল পেরিয়ে যে রাস্তায় এসে পড়ছি সেটা একপাশে নিচের দিকে নেমে গেছে অনেকখানি আর অপর পাশে ছোটো প্রাচীর মতো উঠে গেছে, উভয়ে দিকই ছোটো ছোটো ঝোপঝাড়ে ভর্তি। কোথাও পথ মসৃণ তো কোথাও ছোটো বড়ো বোল্ডারে ভর্তি। কোথাও গাছের দল মাথার ওপর ছায়ার সৃষ্টি করেছে তো কোথাও রোদের তাপ থেকে বাঁচার জন্য ছায়া টুকুও নেই। রাস্তাটা পুরোটাই downhill হলেও কিছু কিছু জায়গায় চড়াই উঠতে হচ্ছে। এরকম ভাবেই চলতে চলতে আন্দাজ 11:15 টা নাগাদ আমরা Alubari campsite এ এসে পৌঁছালাম।

Alubari campsite টা ছিল একেবারে যাকে বলে open meadow, আর তাকে চারপাশ দিয়ে ঘিরে রেখেছে গাছগাছালির দল। সেখানে পৌঁছে আমরা কিছু সময়ে বিশ্রাম নিয়ে আবার পথ চলা শুরু করলাম। এবারের রাস্তাটা ছিল বেশ interesting। রাস্তাটা পুরোটাই ছিল আঁকাবাঁকা আর যত দূর চোখ যায় ততদূর অবধি দুপাশে সবুজ বাঁশবনের জঙ্গল। মাথা ছাড়ানো উঁচু উঁচু বাঁশবনের জঙ্গল টা এতটা ঘন যে একহাত গভীরে কি আছে তা দেখার জো নেই। মাথার ওপরে বাঁশঝাড় গুলো ছায়ার সৃষ্টি করেছিল। শুনেছিলাম যদি ভাগ্য খুব সুপ্রসন্ন থাকে তাহলে সেখানে দু একটা Red Panda র দেখা পেলেও পেতে পারি, তাই সেই আশায় দুপাশের বনের মধ্যে চোখ রেখে চলছিলাম। কিন্তু কিছু পড়েই বুঝলাম যে ভাগ্য মোটেই প্রসন্ন নয় তাই একটাও Red Panda র দেখা পেলাম না।

পাহাড়ে ওঠার সময় মনে হয় ওঠাটাই হচ্ছে কষ্টকর, নামা টা সহজ। কিন্তু চড়াই ওঠার পর যখন নীচে নামার সময় আসে তখন মনে হয় যে নাহ্ ওঠাটাই সবথেকে সহজ ছিল। আমরা চললাম সেই আস্ত বাঁশঝাড়ের ভেতর দিয়ে। মাঝে কিছু জায়গায় পথটা মসৃণ পেলেও এরপর থেকে আর তা পাই নি। সেই পথে নামতে গিয়ে পায়ের অবস্থা শোচনীয় হয়েছিল। প্রায় খাড়াই ভাবে নেমে যাওয়া রাস্তাটার দুপাশে বাঁশবন শেষ হয়ে Rhododendron Magnolia প্রভৃতি গাছের সাথে সাথে আরো অনেক নাম না জানা গাছের সমাহার চোখে পড়লো।

একটু রাস্তাটার বর্ণনায় আসি। আগেই বলেছিলাম যে আমরা চলেছি Singalila region এর dense forest এর ভেতর দিয়ে, তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের মাথার ওপর ছিল ঘন হয়ে আসা লতা পাতার চন্দ্রতোপ আর পায়ের তলায় শুকনো পাতার চাদর। যে কারণে সূর্য রশ্মি ভালো মতন ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে জায়গাটা কেমন স্যাঁৎসেতে হয়ে আছে। কোনো কোনো জায়গায় মোটা গাছের গুঁড়ি, তো কোনো কোনো জায়গায় ছোটো বড়ো পাথর পর পর বসে সিঁড়ির মতো হয়ে আছে (নাহ্ সেটা অবশ্যই মনুষ্য সৃষ্ট না, সেটা প্রকৃতির কারিগরি)। কিছু জায়গায় সেই পাথর গুলো এতটাই উঁচু উঁচু ছিল যে নামার সময়ে বসে পড়ে নামতে হচ্ছিল। কোথাও কোথাও আবার অনবরত ঘোড়া চলাচলের কারণে রাস্তাটা মাঝখানে উঁচু হয়ে দুপাশে গর্ত মতো হয়ে গেছে। তবে শেষের দিকে লোকালয়ের কাছাকাছি আসতে দেখলাম সেখানকার রাস্তাটা পুরোটাই সিমেন্টে বাঁধানো। সে যতই তৈরি রাস্তা হোক না কেনো তা তো পুরোটাই ঢালু হয়ে সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলেছিল একেবারে Gurdum পর্যন্ত। এই রকম রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে হাঁটুর যে কি অবস্থা হতে পারে সেটা আর বলে দিতে হয়ে না।

কিন্তু যত কষ্টই হোক আশপাশের পরিবেশ টা এতটাই মনোরম আর দৃষ্টিনন্দন ছিল যে চলতে চলতে দাঁড়িয়ে পরে যখন তাকিয়ে দেখছিলাম তখন সমস্ত ক্লান্তি কোথায় যেনো হারিয়ে যাচ্ছিলো। চতুর্দিকে এত গাছগাছালি আর সবুজের ভীড় যে চোখের সাথে সাথে সারা শরীর মন জুড়ে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করছিলাম। কলকাতা শহরে এত কংক্রিটের ভীড়ে গাছের সংখ্যা এমনই ধীরে ধীরে কমে আসছে তারপর আবার ক্রমশ বেড়ে চলা গাড়ির রাজত্ব। তাই এরকম শান্ত স্নিগ্ধ নিস্তব্ধ পরিবেশে শত কষ্টও যেনো কোথায় মিলিয়ে যায়। এই সবুজের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এক অদ্ভুত ভালোলাগা আমাকে আলিঙ্গন করতে লাগলো, হারিয়ে যেতে লাগলাম সবুজের ভিড়ে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল প্রকৃতি দুহাত ভরে আমাদের শুধু দিয়ে গেছেন আর আমরা স্বার্থপরের মতো শুধুই তাকে ধ্বংস করে গেছি। তবে এখানে যে বিষয়টা আমার বেশ ভালো লাগলো সেটা হলো এখানকার মানুষজন নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে প্রকৃতির কোনো ক্ষতি তারা করে নি। তাই আমাদেরও উচিত প্রকৃতিকে ধ্বংস না করে তাকে বাঁচানো আর যত্র তত্র আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকা।

সেই সবুজের সমাহারের মধ্যে দিয়ে গিয়ে বেলা 3টে নাগাদ আমরা Gurdum এ এসে পৌঁছালাম। এই জায়গাটাও ছিল ভীষন সুন্দর। চতুর্দিকে ছিল রঙবেরঙের ফুলের সমাহার, আর যে hut এ এসে আমরা পৌঁছে ছিলাম সেটাও ছিল ছবির মতোই। সেখানেই আমরা lunch সেরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিলাম। পথ তখনও অনেকখানিই বাকি ছিল।

4টে নাগাদ আবার sack নিয়ে আমরা চলতে শুরু করলাম। অনেকক্ষণ থেকেই একটা জলের অবিশ্রান্ত বয়ে চলার শব্দ কানে আসছিল। কিছুদূর চলার পর একটা ছোটো মতো বাঁধানো bridge চোখে পড়লো আর তারই নিচ দিয়ে দুরন্ত গতিতে বয়ে চলেছে সেই জলধারা। আমরা সেটাকে cross করে বিপরীত দিকে যেতেই সেখান দিয়ে আবার শুরু boulder zone। ছোটো বড়ো আলগা পাথরে ভর্তি রাস্তাটা কখনো চড়াই উঠছে তো কখনো নামছে। ঢেউ খেলানো পথ। আকাশের অবস্থা তখন বেশ শোচনীয় ছিল। হঠাৎ করে ভীষণ রকম গুরু গম্ভীর শব্দে মেঘ গর্জে উঠলো। অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি পা চালানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু দু এক ফোঁটা করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। তবে বলতেই হবে আমাদের ভাগ্য টা খুব খারাপ ছিল না। যেভাবে মেঘ গর্জন হয়েছিল তাতে মনে হচ্ছিল এবার বুঝি ঢালবে তবে তা হয়ে নি।

আমাদের আগে আগে চলছিলো Sourish da আর Barsha। কিছুটা এগোতেই দেখি ওরা আবার back করছে। জিজ্ঞেস করে জানলাম যে সামনে আর এগোনোর পথ নেই, landslide এ পুরো রাস্তাটা ভেঙে গেছে। অগত্যা আবার নিচের দিকে একটা রাস্তা ধরে আমরা এগোতে থাকলাম। সন্ধ্যে নামার মুখে আমরা জঙ্গলের রাস্তা পেরিয়ে পিচ রাস্তায় এসে পড়লাম। আর একটু এগিয়েই দেখলাম আমরা আমাদের শেষ গন্তব্যস্থল Sirikhola তে এসে পৌঁছে গেলাম। সেখানেই ছিল সেই দিনকার আমাদের শেষ ঠিকানা।

নিজেদের room এ sack রেখে আমরা সবাই fresh হয়ে নিলাম। সেদিন টা ছিল মন খারাপের সন্ধ্যে বেলা। কিন্তু সেই মন খারাপকে বিশেষ প্রশ্রয়ে না দিয়ে একটা জমাটি আড্ডা আর bonfire এর মধ্যে দিয়ে trek এর last দিন টাও আমরা হইহই করেই কাটালাম। Trek successfully complete করার reward হিসাবে Dhrubo da আমাদের প্রত্যেকের হাতে certificate তুলে দিলো। জমাটি আড্ডার সাথে সাথে রাতে জমাটি dinner সেরে আমরা ঘুমের দেশে উড়ে গেলাম।


9th March,

ঘুমটা ভাঙতেই মনে পড়লো আজ ই তো শেষ দিন আর সঙ্গে সঙ্গে মন খারাপ টা আমাকে ঘিরে ধরলো। সেই আগেরবারের মতোই এবারেও মনে হলো যেন বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তাই মন খারাপ টাকে ঝেড়ে ফেলতে ঘুম থেকে উঠে fresh হয়ে বাইরে বেরোলাম একটু হাঁটতে। কিছুটা দূর গিয়ে একটা পাথরের ওপর বেশ কিছুক্ষন বসে রইলাম। তারপর Sourish dar ডাকে ফিরে এসে brekfast করে ফিরে এলাম room এ।

আমাদের ঘর লাগোয়া একটা বারান্দা ছিল, সেখানেই বাকি সময়টা কাটালাম। কিন্তু যতই চেষ্টা করি না কেন ভালো মুহূর্ত গুলোকে মনে করে মন খারাপ টাকে ভুলে যাওয়ার, মন খারাপ কিন্তু পিছু ছাড়লো না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দূরের সবুজ পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে আর বয়ে চলা জলস্রোতের আওয়াজ শুনতে শুনতে মনে হলো আবার কবে আসবো? আদৌ আবার আসতে পারবো তো? যদি আর কখনো ফিরে আসতে না পারি? সেই এক অজানা ভয়ে। মনে হলো থেকে যাই এখানেই পাহাড়ি নিস্তব্ধতাকে সঙ্গী করে।

এমন কিছু মানুষদের এবারে সঙ্গী হিসাবে পেয়েছিলাম যে যাদের সামনে মন খারাপও হাসিতে পরিণত হয়ে যায়, কান্নাও হইহই তে পাল্টে যায়। হাজার চাইলেও চুপ করে বসে থাকা যায় না। তাই ফেরার সময়ে মন খারাপ হলেও সেটার স্থায়িত্বকাল ছিল ক্ষণস্থায়ী।

9:30 টায়ে আমাদের গাড়ি এসে গেছিলো, তাতে এক এক করে নিজেদের sack গুলো তুলে দিয়ে আমরাও চেপে বসলাম গাড়িতে। তারপর গাড়ি আমাদের নিয়ে চললো আমাদের NJP station এর দিকে। Trek এর শুরুতে যে পর্বতশ্রেণী নিজেকে ঘন কুয়াশার চাদরে একেবারে ঢেকে রেখেছিল সেই পর্বতশ্রণীই শেষ দিনে ফেরার সময় নিজেদেরকে আমাদের কাছে মেলে ধরেছিল। সেই ঠান্ডা মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য কে উপভোগ করতে করতে আমরা এগিয়ে যেতে লাগলাম। একে একে Rimbick, Dhotrey, Maneybhanjang পেরিয়ে আমরা এসে পৌঁছালাম Gopaldhara এ। সেখানে lunch সেরে কিছু কেনাকাটা করে আবার গাড়িতে চেপে বসলাম। এরপর গাড়ি আর কোথাও না দাঁড়িয়ে সোজা চলে গেলো station এর দিকে।

Station এ দাঁড়িয়ে কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। ভাবছিলাম যেখান দিয়ে 5দিন আগে একটা নতুন adventure এর সূত্রপাত হয়েছিল, একটা নতুন উত্তেজনার ঘেরাটোপের মধ্যে ছিলাম, আবার ডানা মেলে উড়ে গেছিলাম নতুন পথের বাঁকে আজ সেই জগৎ থেকে বেরিয়ে, সেই জঙ্গল আর পাহাড়ি রাস্তা ছেড়ে ঘুরে ফিরে সেই একই জায়গাতে এসে পৌঁছে গেলাম, সেই কংক্রিটের ভীড়ের মাঝে। আবার নিজেকে ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়েও একা আবিষ্কার করলাম। সব যেনো চোখের নিমেষে আছে থেকে নেই হয়ে গেলো, হারিয়ে গেলো।

এবার সেই মুহূর্তের পালা। 4th March NJP station এ আমরা যেভাবে একে একে এসে জড়ো হয়েছিলাম, 9th March আবার ঠিক সেই জায়গা থেকে একে একে বিচ্ছেদের পর্ব শুরু হলো। বিকেলের দিকে Sourish dar train ছিল তাই station এ পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের বিদায়ে জানিয়ে চলে গেলো। রয়ে গেলাম আমরা 6জন। আমাদের train অনেকটা দেরিতে ছিল বলে বাইরে কিছুটা সময়ে কাটিয়ে একেবারে dinner করে station এ ফিরে এলাম। তারপর একে একে Barsha আর Shantanu dar চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেলে তারাও train ধরার জন্য চলে গেলো। বাকি আমরা 4জন 8:30 টা নাগাদ উঠে পড়লাম train এ।


10th March,

সকাল 7টা নাগাদ Sealdah এ এসে পৌঁছালাম। আবার কোনো এক নতুন জায়গায় নতুন পথের বাঁকে দেখা হবে এই আশ্বাস দিয়ে আমরা 4জন একে অপরকে বিদায়ে জানিয়ে যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।

**********************


Full team from Left Sulagna (Sitting), Shantanu, Anurupa, Sulagna, Barsha, Sourish, Trek Leader Dhrubo(Sitting)


পাহাড়ে তৈরি হওয়া বন্ধুত্ব গুলো ভীষণ সুন্দর হয়ে। সেই বন্ধুত্ব বয়স দেখে না, রঙ দেখে না, ভাষার বিভিন্নতা দেখে না, কে কোন background এর তা দেখে না, high status low status বিচার করে না। সেই বন্ধুত্বের মধ্যে থাকে না কোনো অহংকারের ছোঁয়া, থাকে না কোনো প্রতিযোগিতা বা একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার মনোভাব। একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে একে ওপরের সাথে। এক নির্ভেজাল বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আর হবে নাই বা কেন পাহাড় যে আমাদের শেখায় নিজের মধ্যেকার সমস্ত অহংকারকে চূর্ণ করে উদার হতে, মন দিয়ে ভালোবাসতে, প্রাণ খুলে হাসতে। একে অন্যের অবলম্বন হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে শেখায়। প্রকৃতি আমাদের নতুন ভাবে ভালোবাসতে শেখায়। বেঁচে থাকতে শেখায়। বেঁচে থাক এমন নির্ভেজাল পাহাড়ি বন্ধুত্ব গুলো।

Trek এর শুরুতে আমরা একে অপরের কাছে ছিলাম সম্পূর্ণ অচেনা মানুষ। আমাদের মাঝে শুধু একজনই common man ছিল, ধ্রুব দা। তার ওপর ভরসা করেই আমরা বেরিয়ে পড়েছিলাম নতুন ঠিকানায়। আর Trek শেষ করলাম family হয়ে। Briefing দেওয়ার সময় যখন Dhrubo da বলে "we are family", সেই কথা টা যে কত টা সত্যি সেটা একেবারে শেষ দিন গিয়ে বুঝতে পারি। তাই সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যখন চলে আসতে হয়ে তখন ভীষণ খারাপ লাগে, কষ্ট হয়। আবার কবে এভাবেই সবাই মিলে হইহই করতে করতে নতুন পথে পাড়ি জমাবো সেটা কিন্তু আমরা কেউই জানি না। কিন্তু তাও আশ্বাস টুকু থাকে দেখা হাওয়ার, একে অপরের সাথে connected থাকার।


Full Team

আর রইলো বাকি পাহাড়ের কথা, সেখানে তো ফিরতেই হবে আবার। সেই পাহাড়ি ডাক কে কিছুতেই উপেক্ষা করতে চাই না আমি, আর সেই ক্ষমতাও আমার নেই। আর তার থেকেও বড়ো কথা হলো তোমাকে একবার দেখে যে মন ভরে নি আমার হে কাঞ্চনজঙ্ঘা। যত বারই দেখি না কেনো তোমাকে প্রতিবারই মনে হবে আর একটু দেখি। প্রতিবারই মনে হবে যেনো তোমার নতুন নতুন রূপ দেখছি। তাই Aahl এ থাকাকালীন খালি মনে হয়েছিল এখানে বসে শুধুই তোমাকে দেখতে থাকি। মনে হয়েছিল থেকে যাই। প্রথমবার তোমাকে দেখার যে কি আনন্দ সেটা বলে বোঝানো খুব কঠিন। বাড়ি ফিরে আসার পরেও চোখ বন্ধ করলেই শুধু তোমার ঐ অপার্থিব সৌন্দর্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তোমাকে দেখতে পাই আমি। তোমার ঐ রূপের ঝলক দেখে পাগল হওয়ার জন্য বারবার যেতে রাজি আছি। আশীর্বাদ করো যেনো বারবার শতবার শত কষ্ট সহ্য করে হলেও তোমার কাছে যেনো আসতে পারি। তোমার রূপে যেনো পাগল হতে পারি, নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারি। চিরদিনের জন্য তোমার রাজ্যের অধিবাসী যেনো হতে পারি।



----- সমাপ্তি -----

bottom of page