top of page
Writer's picturePritam Sarkar

An unsuccessful achievement

Updated: Oct 13, 2023

পাহাড় বলুন কিংবা পর্বত দুটোই অনেকটা নারীর মতো। কখন যে মুড swing হবে আপনি ধরতে পারবেন না। প্রেমে পড়লে তো আরও মুশকিল। কারণ বুঝতে হবে আপনাকেই। ওই একটা গান আছে- "এই ভালো, এই খারাপ/ প্রেম মানে মিষ্টি পাপ।" কিন্তু পাহাড়ের প্রেম মানে বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, এপাস ওপাস আর ধপাস। কিন্তু প্রেম তখনও থেকে যাবে।


Full Team ( From Left:- Krishanu Biswas, Priyanka Chatterjee, Sourav Shankar Basu, Pritam Sarkar, Souriddha Sanyal, Puloma Mukherjee, Arup Samanta, Ayanangshu Maity, Gautam Bhattacharya, Shubhojit Adhikari, Samir Banerjee) (Seating:- From Left, Dhrubojyoti Chatterjee, Ashim Kumar Biswas)


২৮.০৪.২০২৩ পশ্চিমবঙ্গের তীব্র দাবদাহ থেকে বাঁচার জন্য ৫ বন্ধু মিলে ছুটলাম শৃঙ্গ জয় করতে। হাওড়া থেকে দুন এক্সপ্রেসের শীতল হাওয়া খেতে খেতে উত্তরাখণ্ডের উদ্দেশ্যে দিলাম পাড়ি। গন্তব্য KUARI PASS এবং PANGARCHULA SUMMIT. যথারীতি দুন এক্সপ্রেস তার যথার্থ সম্মান রক্ষার্থে মাত্র ৪ ঘন্টা বিলম্বে হরিদ্বার পৌঁছায়। বড়ো রাস্তায় আমাদের জন্য গাড়ি আর বাকি সহসঙ্গীরা অপেক্ষারত। গাড়ির সামনে পৌঁছতেই ট্রেক ব্যাগ চলে গেল গাড়ির ছাদে আর আমরা ভিতরে। শুরু হলো ১২ ঘন্টার যাত্রা হরিদ্বার থেকে যোশিমঠ। একটু দূর পৌঁছতেই চলে এলো পাহাড়ের অসময়ের সঙ্গী বৃষ্টিপাত। যোশিমঠ পর্যন্ত সঙ্গ দিয়েছেন উনি।

রাতের পাহাড় আর শীতল আবহাওয়া যেন রোমান্টিকতা তৈরি করছিল আমাদের মধ্যে কিন্তু ওই যে ৯ জন বাদে আমরা বাকি ৩ জন সিঙ্গেল । তাই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে সিঙ্গেল বেডে ঘুমিয়ে পরাটাই বেশি দরকারি মনে হলো।


যোশিমঠ থেকে তুগাসি হয়ে গালিংটপ।

১.০৫.২৩ঃ- সকাল ৭ টায় ভাঙলো ঘুম লিডার ধ্রুবজ্যোতির ডাকে - Everyone wake up. Tea ready. Come on wake up. কিন্তু ঠান্ডা ওয়েদার আর গরম করা লেপ অনেকটা নতুন বিয়ে করা স্বামী-স্ত্রীর মতো সহজে ছাড়তে ইচ্ছা করে না । কিন্তু উঠতে হবে আবার স্নান করতে হবে তাও বরফ গলা ঠান্ডা জলে। ৮ টার মধ্যে তিন-চারজন বাদ দিয়ে সবাই তৈরি যাওয়ার জন্য। ওয়েদার তখনও আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সবার রেডি হতে হতে ৯ টা বেজে গেল।

গাড়ি এসে পৌঁছেছে আর লিডার ধ্রুবজ্যোতি হাঁক ছেড়ে বল্লো "Come on guys we r running late. চলো সবাই গাড়ির কাছে।"


On the way to Tugasi


মা আর এক বন্ধুর সাথে শেষ কথা বলে বেড়িয়ে পড়লাম একটি ছোট্ট গ্রাম 'তুগাসি' -র দিকে। গাড়ির ভিতর থেকে সিনিক বিউটি, আহা! যেন মনের ভিতর উত্তেজনা সৃষ্টি করছে ঠিক তেমনি সৃষ্টি করছে ভয়। কারণ ঘন কুয়াশা আর মেঘের জন্য একহাত দেখা যাচ্ছিলো না। আর আমাদের ড্রাইভার কানে ফোন নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে। তুগাসি পৌঁছে শুরু হয়ে গেল বৃষ্টি। গাড়ি থেকে নেমে পিঠে ব্যাগ নিয়ে রেইনকোট আর অনেকে পঞ্চো চাপিয়ে বাবা কেদারনাথ, বিশাল বদ্রী, নন্দাদেবীর নাম নিয়ে শুরু হলো যাত্রা গালিংটপের দিকে, আমাদের প্রথম ক্যাম্প সাইট (তুগাসি টু গালিংটপ- ৪ কিঃমিঃ) ছোট্ট গ্রামের ভিতর দিয়ে শুরু হলো উপরে ওঠা। চলতে চলতে শুরু হলো ছবি তোলা আর বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করা। বৃষ্টির পাহাড় যেন সুন্দর করে সেজে ওঠা নারীর মতো। সবুজ গাছ, পাহাড় থেকে নেমে আসা ছোট্ট ঝর্না, পাখিদের কলকাকলিতে চারিদিকে যেন অপরূপ শোভা পাচ্ছে। পিঠের উপর ১৪ কিলোর ব্যাগ নিয়ে উপরে উঠতে একটু কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু মনের জোর হারালে যে চলবে না। উপরে রে যেতেই হবে। বেলা ১.৩০টা নাগাদ আমরা পৌঁছলাম ক্যাম্প সাইট। টেন্টের ভিতর ঢুকে ব্যাগ রাখতে না রাখতেই এলো লাঞ্চের ডাক। লাঞ্চের শেষে বন্ধুরা মিলে চললাম ফটো সেশন করতে।


Gulling Campsite


পাহাড়ের গল্প একটু অন্য। পাহাড় হাসে, পাহাড় কাঁদে। সেই হাসি-কান্না নির্ভর করে আমাদের মতো অধমের উপর।

টিম লিডার ধ্রুবজ্যোতি বলেই দিয়েছিল পাহাড়ের যত্ন নেওয়া কিন্তু আমাদের উপরেই। তাই যেন কোনো রকম প্লাস্টিক আমরা পাহাড়ের যত্রতত্র না ফেলি, এবং নিজেদের সমস্ত প্লাস্টিক একত্রে জড় করে সেটি পাহার থেকে নামিয়ে নিয়ে এসে কোন শহরের ডাস্টবিনে ফেলে দিতে ।


Astonishing view from Gulling Campsite


লিডার টাইম বেঁধে দিল ৭ টায় চা, ৮টায় ব্রেকফাস্ট এবং ৯ টায় আমরা বেড়িয়ে যাব নেক্সট ডেস্টিনেশন খুল্লারা -র উদ্দ্যেশে যার দূরত্ব মাত্র ৮ কিঃমিঃ। জঙ্গল পেরিয়ে যেতে হবে আমাদের খুব সাবধানে। কারণ সারারাত বৃষ্টি হয়েছে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বৃষ্টি হচ্ছে তখনও। ৮.৩০ টায় বেড়িয়ে পড়লাম আমরা রেইনকোট চাপিয়ে। একটু ওঠার পর জঙ্গল ঘন থেকে আরও ঘন হতে শুরু করলো। রাস্তা পিচ্ছিল, ঘন কুয়াশায় ভরা। ঠিক ভৌতিক সিনেমার জঙ্গলের মতো। কিছু কিছু জায়গা এতটাই খাড়া আর পিচ্ছিল যে উঠতে ভয় লাগছিল। পাখিদের কিচিরমিচির এর সাথে ঝর্নার আওয়াজ। বিশ্রাম নিতে নিতে যত উপরে উঠছি ততই ঠান্ডা বেড়ে চলেছে আর হাওয়ার গতিবেগ বাড়ছে সাথে কমছে অক্সিজেন লেভেল।


On the way to Khullara


বেলা ২ টো নাগাদ তখন আমরা ক্যাম্প সাইট থেকে ২ কিঃমিঃ দূরে। আমাদের বন্ধু চিৎকার করে উপর থেকে বললো বরফ দেখা যাচ্ছে। রাস্তার বোল্ডার, কাদা পেড়িয়ে উত্তেজনা নিয়ে সবাই এগোতে থাকলাম। বরফ দেখে তখন আমরা খুব খুশি। কিন্তু সেই খুশি যে ক্ষনিকের সেটা বুঝতে পারি নি। তখন আমরা ক্যাম্প থেকে ১ কিঃমিঃ দূরে। পাহাড়টা ক্রস করলেই দূর থেকে ক্যাম্প সাইট দেখতে পাব।

বিশ্বাস করুন পাহাড় ক্রস করতে না করতেই এলো দমকা শীতল হাওয়া আর সাথে বৃষ্টি। মনে হচ্ছিলো আত্মাটা খাঁচা থেকে এখনই বেরিয়ে পড়লো বলে। হাতের আঙ্গুলগুলো অবশ হয়ে গেল। ঠান্ডায় তখন আমরা কাঁপছি রীতিমতো। কিন্তু ক্যাম্প পর্যন্ত যেতেই হবে। মনের জোর নিয়ে এগোতে থাকলাম। ৩০ মিনিট হাঁটার পর যখন পৌঁছলাম যেন স্বস্থির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলাম।


A Dusk in Khullara Campsite


কুয়ারি পাস সামিটের দিন বোধহয় স্বয়ং মহাদেব মনে হয় একটু রুষ্ট ছিলেন। তাই প্রকৃতির এমন রোষে পড়বো সেটা কল্পনাতীত ছিল আমাদের কাছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরই দেখলাম আকাশটা কেমন মুখ ভার করে আছে। ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে। স্বাভাবিক মুখ সবার ভার। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম যাবই না। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা এমন একটা কথা বললো যে যেতেই হলো। ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে নিলাম তাড়াতাড়ি। পিঠে ছোট্ট ব্যাগ তাতে জলের বোতল আর কিছু স্ন্যাক্স নিয়ে নিলাম, তার উপর চাপিয়ে নিলাম রেইনকোট। শুরু হলো আমাদের কুয়ারি পাস সামিটের যাত্রা। প্রথমেই খাড়া রাস্তা সাথে বোল্ডার। এই পেরিয়ে উঠতে হবে আমাদের উপরের দিকে। যত উপরে উঠছি তাপমাত্রা কমতে কমতে মাইনাসে মেতে থাকলো। চারিদিকে বরফ জমে আছে। অসাধারণ সেই দৃশ্য।


On the way to Kuari Pass


শুরু হলো বরফের রাস্তা। বরফ দেখতে যত সুন্দর ততটাই ভয়ংকর। পায়ে গ্রীপ আর জোর না থাকলে সোজা নীচে। উঠে পড়লাম পাহাড়ের মাথায়। চারিদিকে সাদা শুভ্র বরফ। মনে হচ্ছিলো স্বর্গে এসে পৌঁছেছি। বরফ পেরিয়ে একটু এগোতেই লিডার বললো গেইটারস পড়ে নিতে(গেইটারস যেটা আমাদের পা প্রোটেক্ট করে বরফ থেকে। বরফ যাতে জুতোর ভিতর ঢুকে না যায়।)


Panoramic view on the way to Kuari Pass


গেইটারস পড়ে একটু এগোতেই শুরু হলো প্রকৃতির তান্ডব। হঠাৎ করে শুরু হলো তুষার ঝড়, এবং চারিপাশে কিচ্ছুই দেখা যাচ্ছে না । সেই অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়। তবুও আমরা এগিয়ে চললাম। বরফের জন্য গাইড ট্রেল হারিয়ে ফেললেও ঠিক খুঁজে বের করে ফেলে। সত্যি ওদের মধ্যে আলাদাই প্রতিভা আছে। কুয়ারি পাস থেকে তখন আমরা ১ কিঃমিঃ দূরে।


Dark Clouds on the sky


গাইড আর লিডার ডিসাইড করলো আর যাওয়া ঠিক হবে না আমাদের। হয়তো পৌঁছে যাব কিন্তু ফিরতে পারবো না। বরফ তখন আমাদের হাঁটু অবধি উঠে এসেছে। আমরা ছবি তুলে ব্যাক করলাম।


Due to whiteout and snowstorm we could reach upto Gailgad


ফেরার পথে বন্ধুরা মিলে বরফে একটু মজা করলাম। আমার আগে সবাই নেমে গেছিলো। আমি যখন খুল্লারা ক্যাম্প সাইট পৌঁছলাম ঠিক তখনই শুরু হলো স্নোফল। টানা ছয় ঘণ্টা সেই স্নোফল চলে। মাঝে মাঝে লিডার ধ্রুবজ্যোতি এসে টেন্টের উপর থেকে বরফ ঝেড়ে যাচ্ছে। টেম্পারেচার তখন মাইনাস ৭° এর কাছাকাছি হবেই। এই অনুভূতি অনুভব করতে হয়, কাউকে বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না ।

কুয়ারি পাস সামিটের পর টেন্টে ফিরে এসে পরের দিনের পাঙ্গারচুলা সামিটের দিন কি হবে সেই সব না ভেবে টেন্টে বসে শুধু লুডো আর দাবাতে কনসেন্ট্রেট করাটাই বেশি ভালো হবে ভেবে, তাই করতে বসলাম। বাইরে তখন তুষারপাত। একবার টেন্টের বাইরে উঁকি মেরে দেখলাম পুরো খুল্লারা ক্যাম্প সাদা বরফের চাদরে ঢেকে গেছে। ৪ টে নাগাদ চা রেডি করে লিডার দিল হাঁক। বাইরে বেড়ানো ঠিক হবে নাকি ভাবতে ভাবতে লিডার বললো বেরিয়ে এসো এনজয় করো। কিন্তু এই এনজয় করতে গিয়ে রে পরের দিন ধনঞ্জয়ের মতো ঝুলতে চলেছি বুঝতে পারি নি।


Campsite after the snowfall

তুষারপাত - চা - পাহাড় কম্বিনেশনটা প্রেমিকার চুমুকেও হার মানায়। সব বন্ধুরা মিলে প্রচুর ছবি তোলা হয়। আবার লিডারের হাঁক যা আমাদের মধ্যে বিষন্নতার সৃষ্টি করে। লিডারের উক্তি- রাত্রিবেলায় এমন ওয়েদার থাকলে পাঙ্গারচুলা সামিট করা যাবে না। আলোচনা করতে করতে তুষারপাত হলো বন্ধ। দূর দ্রোনাগিরির পিছন দিয়ে সূর্য তখন অস্তগামী। সূর্যের অস্তের সাথে সাথেই দেখা দিল চাঁদ। আহা! কি সেই শোভা, মন জুড়িয়ে গেল। কিন্তু ভগবানের এটা দেওয়া ছিল ক্ষনিকের আনন্দ। রাতে আবার সেই কালো মেঘ আর বৃষ্টি সাথে স্নোফল।


A beautiful dusk at Khullara Campsite

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম আকাশ পরিষ্কার। কিন্তু যেই পরিমান বরফ পড়েছে তাতে পাঙ্গারচুলা সামিট করা অসম্ভব। ডিসাইড হলো আমরা নীচে ফিরবো। যেমন বলা তেমন কাজ। লোটা কম্বল গুটিয়ে চললাম নীচে তুগাসি-র উদ্দ্যেশে, তারপর যোশিমঠ। মন সবার খারাপ ছিল। কিন্তু জেদ চেপে গেল আমাদের মধ্যে পাঙ্গারচুলা সামিট করবোই।


Mount Dronagiri from Khullara Campsite


হিমালয় ফিরিয়ে দিয়েছে, হিমালয় টেনে নেবে কাছে। হিমালয়ের থেকে শিখেছি অনেক। আরও শেখা বাকি। শিখলাম লিডারশিপ, সবার সাথে মিলে মিশে যাওয়া, কঠিন পরিস্থিতিতে একে ওপরের সাথে থাকা সে ব্যক্তি যতই অচেনা হোক না কেন, পাহাড়ে survive করা। আরও শেখা বাকি। আরও শিখতে হবে। হার মানি নি হার মানবো না।



Recent Posts

See All

Comments


bottom of page